মধ্যমেধা নাকি গবেষণার অভাব? ওয়েব সিরিজে ‘জেলা পুলিশ কমিশনার’ পদ সৃষ্টি করলেন অঞ্জন দত্ত

অনুভব খাসনবীশ: অঞ্জন দত্ত। তাঁর বহু পরিচয়। যদিও তার মধ্যে সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, অভিনেতা এবং পরিচালক, এই চারটিই অগ্রগণ্য। সম্প্রতি ইউটিউব ও ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে যারা…

অনুভব খাসনবীশ: অঞ্জন দত্ত। তাঁর বহু পরিচয়। যদিও তার মধ্যে সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, অভিনেতা এবং পরিচালক, এই চারটিই অগ্রগণ্য। সম্প্রতি ইউটিউব ও ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে যারা কনটেন্ট তৈরি করেন, তাঁদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। কন্টেন্ট ক্রিয়েটারদের ‘ট্রেনের হকার’দের সঙ্গে তুলনা করেছেন। শুধু তাই নয়, তাদের ‘মধ্যমেধা’র বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন Chamba Lama: কলকাতার রুপোর গয়নার ওয়ান স্টপ শপ

অঞ্জনের নতুন সিরিজ ‘মার্ডার ইন দ্য হিলস’ নিয়ে যেসব সমালোচনা ও মিম বানানো হয়েছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালকের এই কটাক্ষ বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও তারপরেই অঞ্জনের কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটার, বিশিষ্টজনেরাও। বিশেষত ইউটিউবার ঝিলম গুপ্ত এবং গল্পকার-ঔপন্যাসিক বিনোদ ঘোষালের তোপের মুখে পড়েছিলেন তিনি। এই অঞ্জনই এক সময়ে হকারদের নিয়ে লিখেছিলেন, ‘বসে আছি ইস্টিশানেতে, লেবু লজেন্সের শিশিটা হাতে’ গানটি। এবার ‘ইউটিউবার’দের মধ্যমেধার বলা অঞ্জনই এবার অদ্ভুত ভুল করলেন তাঁর নতুন সিরিজে।

hoichoi releases trailer of Anjan Dutt's Murder in the Hills | Indiablooms  - First Portal on Digital News Management

অগাথা ক্রিস্টির ‘মার্ডার ইন দ্য হিলস’ এর নামে ‘হইচই’য়ের সিরিজ পরিচালনা করেছেন ‘বেলা বোস’ এর স্রষ্টা। চিত্রনাট্যও লিখেছেন তিনিই। ওই সিরিজে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজদ্বীপ গুপ্ত। রাজদ্বীপের চরিত্রের নাম শুভঙ্কর। শুভঙ্কর ‘জেলা পুলিশের কমিশনার’। আদপে পুলিশ কমিশনার কোনও পদ নয়। কমিশনারেটের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাই হলেন পুলিশ কমিশনার। এবং ‘জেলা পুলিশ কমিশনার’ বলে আদপে কিছুই হয় না। ঠিক এই জায়গাতেই প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক চিত্রদীপ চক্রবর্তী।

অঞ্জন দত্ত এবং রাজদ্বীপ গুপ্ত।

সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, “একজন ক্রাইম রিপোর্টার নিজেকে তদন্তকারী ভাবলে, আর একজন তদন্তকারী নিজেকে ক্রাইম রিপোর্টার ভাবলে যা হয়, পর পর দুটি বাংলা ওয়েব সিরিজ দেখে তাই মনে হলো। মিনিমাম রিসার্চ নেই। ভেবে নেওয়া হলো, আমরা সবজান্তা। যা দেখাবো, দর্শক তাই দেখবে। জেলা পুলিশে কমিশনার পদ বাপের জন্মে শুনিনি। পাহাড় কেন্দ্রীক একটা সিরিজে তাই দেখলাম। সম্মানীয় বিজ্ঞ পরিচালকরা এসব বানানোর আগে গবেষণা না করুন, একটু পড়াশুনো তো করে নিতে পারেন। ক্রাইম থ্রিলারের প্লটকে গাঁজাগলিতে ঢুকিয়ে তা বার করে আনার কৌশলটাও জানতে হয়। আঁতলামি দিয়ে হয় না। আমাকে মূর্খ-হকার সবকিছু বলতে পারেন। মাইরি বলছি, কিচ্ছু মনে করব না।” আরেকজন সেই পোস্টের কমেন্টে লিখেছেন, “ওই থানাতেই কিন্তু এস আই, আই সি ও কমিশনার পোস্টিং আছে ওয়েব সিরিজে, এটা ত্রুটি।”

ফলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, ইউটিউবারদের মধ্যমেধার বলা অঞ্জন এই ভুল করলেন কী ভাবে। তাঁর এই ভুল কি মধ্যমেধারই ফলA? না পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব? এমনিতেই ওটিটি আসায় আরও কাছাকাছি চলে এসেছেন গল্পকার এবং দর্শকরা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কন্টেন্টের সংখ্যাও। শিল্প হয়ে যাচ্ছে নিছকই ব্যবসা। ফলে বেশিরভাগ সিরিজই বানানো হচ্ছে খুব কম সময়ে। তাতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কোনওসময় ভালো অভিনেতা থাকা সত্ত্বেও দুর্বল চিত্রনাট্যের ফলে মান পড়ে যাচ্ছে সিনেমার। আবার কখনও ভালো চিত্রনাট্য পেয়েও নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না অভিনেতারা, কারণ পর্যাপ্ত রিহার্সালের সময় পাননি। যা দেখা গেল ‘মার্ডার ইন দ্য হিলস’ সিরিজেও।

আরও পড়ুন ভারতের সবচেয়ে বড় পতিতালয়ের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে ঠাকুরবাড়ির নাম

দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে অঞ্জন লিখেছিলেন, ‘‘গুচ্ছের বাংলা পোর্টাল এবং ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম হয়েছে ডিজিটালাইজেশন এর দৌলতে। যারা ক্রমাগত ভুল বাংলা এবং খুব খারাপ ইংরিজিতে কথা বলে নানা বিষয় মন্তব্য করে যায়। কারুর ‘শ’ এর দোষ, কারুর উচ্চারণ পরিষ্কার নয়… আমি এটা লিখছি কারণ সেই ভাবে কেউ আমাকে গালমন্দ করেননি। আর করে থাকলেও সেটা আজকের দুনিয়ায় কোনো মূল্য নেই। আমি লিখছি কারণ এই সামগ্রিক, প্রায় সর্বজনীন মিডিওক্রিটি বা মধ্যমেধা নিয়ে যে কোনো সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবে। কারণ আমার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ক্রমাগত এই অশিক্ষিত নোটিফিকেশনগুলো আসে।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, অঞ্জন দত্তের এই শিশুসুলভ ভুলও তো এই ‘গুচ্ছের’ ওটিটিরই ফসল। তাড়াহুড়োতে তিনি পর্যাপ্ত রিসার্চটাই করার সময় পাননি। অথবা তিনি ‘জেলা পুলিশ কমিশনার’ সম্পর্কে জানতেনই না বা জেনে নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেননি। জনৈক নেটনাগরিক বলছেন, “এইগুলির যে কোনওটিই এই ভুলের কারণ হতে পারে। তবে শুধু অঞ্জনই নন, অনেক পরিচালক-চিত্রনাট্য নির্মাতাই ‘যা ইচ্ছে তাই’ দেখিয়ে যান দর্শককে। তার বাস্তবতা বা সত্যতা যাচাই করার প্রয়োজনও মনে করেন না। এবং এটি হচ্ছে ‘গুচ্ছের’ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বা ‘গুচ্ছের’ ওয়েব সিরিজ রিলিজের ফলে। অবশ্য সমস্ত ওয়েব সিরিজই যে এরকম তা ভাবার কোনও কারণ নেই। বহু ওয়েব সিরিজই জায়গা করে নিচ্ছেন দর্শকদের মনে।”