বাঙালির পাহাড় জয়: সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়াই ধৌলাগিরির শীর্ষে প্রথম ভারতীয় মহিলা

বিশেষ প্রতিবেদন: কোনও সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ধৌলাগিরি (৮,১৬৭ মি.) শৃঙ্গে আরোহন করলেন পিয়ালি বসাক (Piyali Basak)। এই প্রথম একজন ভারতীয় মহিলা সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ৮…

Piyali Basak

বিশেষ প্রতিবেদন: কোনও সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ধৌলাগিরি (৮,১৬৭ মি.) শৃঙ্গে আরোহন করলেন পিয়ালি বসাক (Piyali Basak)। এই প্রথম একজন ভারতীয় মহিলা সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ৮ হাজার মিটারের একটি শৃঙ্গের চূড়া স্পর্শ করতে পারলেন। এবং নারীপুরুষ নির্বিশেষে প্রথম বাঙালি যিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন (সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ৮,০০০ মিটার পিক)।

এই সাফল্য ঐতিহাসিক, ভারতীয় পর্বতারোহনের ইতিহাসে পিয়ালী চিরস্থায়ী হল। শুক্রবার সকালে কাঠমান্ডুর পর্বতারোহণ আয়োজনকারী সংস্থা পায়োনিয়ার অ্যাডভেঞ্চার এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

ধৌলাগিরি পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ। আরোহণের নিরিখে আট হাজার মিটারের অন্যান শৃঙ্গের অনেকগুলির তুলনায় যথেষ্ট দুর্গমও। তা জয় করেছে চন্দননগরের এই মেয়ে। ২০১৮ তে পিয়ালী ভারতের প্রথম অসামরিক মহিলা হিসেবে মানাসলু শৃঙ্গ আরোহণ করেন। আর্থিক অনটনকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্নপূর্ণা অভিযানে। সাফল্য আসেনি। একই কারণে ২০১৯তে একদম শেষ মুহূর্তে এসে ওঠা হয়নি এভারেস্টের শীর্ষে। সমস্যা করেছিল ট্রাফিকও।

Piyali Basak

শেরপা নিয়েও অনেক বিতর্ক হয়েছিল পিয়ালির। ক্রাউড ফান্ডিং করে এভারেস্ট অভিযানে শিখরের সামনে থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল পিয়ালিকে। এবার এসেছে সাফল্য। ধৌলাগিরি পর্বত এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন সামিট করেছেন, যার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া হয়েছে। অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া সমস্ত আটহাজারীই অত্যন্ত কঠিন শৃঙ্গ, যে কারণে অনেক পর্বতারোহীই অক্সিজেনকে ড্রাগ বলে মনে করে থাকে।

তাঁর এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছে তাঁর বাংলাদেশের এক পর্বতারোহী বন্ধু। মানস বালা জানিয়েছেন , “মার্চে যেভাবে অর্থসংকটে নেপাল থেকে ফিরে আসা, ১৫-২০ লক্ষ টাকার লোন মাথায় নিয়ে, পর্বতারোহণে কতটা প্যাসনেট হলে মানুষ সবকিছু পেছনে ফেলে সেপ্টেম্বরে আবার এক্সপেডিশনে যায় এবং প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে অক্সিজেন ছাড়া ধৌলাগিরি সামিট করে। সত্যিই আপনার মানসিক দৃঢ়তা এবং পর্বতারোহণের প্যাশন অকল্পনীয়।বাংলাদেশ থেকে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা”।

পিয়ালি জানিয়েছেন, “আমি যখন অন্নপূর্ণা অভিযানে অসফল হয়ে ফিরি তার আগে ৮ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলাম। ২০১৯ সালে এভারেস্ট অভিযানে ১১ লাখ টাকার লোন নিয়েছিলাম। অন্নপূর্ণা অভিযানের সময় কিছু লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম যারা লোন করে দিতে পারে কিন্তু কেউই লোন করে দিতে পারেনি যেহেতু আমার স্কোর অনেক কম তাই কোন জায়গা থেকেই আমি আর লোন পাইনি। আমাকে আজ পর্যন্ত সাহায্য যারা সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন তাদের প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ থাকব।

আগেরবারের অভিযানে ৮৮হাজার ২০০ টাকা সাহায্য পেয়েছিলাম এবং বাকি কিছু টাকা অনেক চেষ্টা করেও লোন নিয়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা হয়েছিল। তা নিয়েই গিয়েছিলাম। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং দেশের সম্মান বাড়াতে আমার দায়িত্ব পালন করতে কোনও কিছু থেকেই পিছপা হইনা। তারপরেও আমি অনেক চেষ্টা করেও অন্নপূর্ণা জয় করতে পারিনি। কিন্তু মনে মনে জেদটা ছিল। আমাকে নেপালের এজেন্সি বলেছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আবার ধৌলাগিরি(৮১৬৭ মিটার), পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ অভিযান আছে সেখানেও ভারত থেকে কোন মেয়ে এখনও সফলভাবে আরোহন করেনি তাই সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে আমি যদি আমার আর্থিক পরিস্থিতি ঠিক করে আসতে পারি তাহলে ধৌলাগিরি অভিযান সফল ভাবে সম্পন্ন করার সুযোগ আছে।’ সবকিছুকে এবার হারিয়ে জয়ী পাহাড়প্রেমী পিয়ালি।